আরসিবিডিএএ’র ফল উৎসব

আরসিবিডিএএ’র ফল উৎসব

ঋতুর পালাবদলে বাহারি মৌসুমি ফলের ডালা নিয়ে হাজির হয়েছিল গ্রীষ্ম। আম, জাম, জামরুল, কলা, কাঁঠাল, লিচু, তাল, বেল, পেয়ারা, ডেউয়া, বাঙ্গি, তরমুজ, আনারস, কতবেল, আমড়া, করমচা, লটকন, গাব, অড়বরই, আঁশফল, কাউফল, তুঁতফল, বেতফল, চুকুর, সফেদা, পেপে, বঁইচিসহ নাম না জানা হরেক রকম দেশি ফলের সুবাসে ম-ম ছিল বাংলার প্রতিটি জনপদ। আষাঢ়েও তার রেশ কাটেনি।

ঋতু বৈচিত্রের এই দেশে ‘ঘটা করে’ ফল খাওয়া আবহমানকাল থেকেই বাঙালির অন্যতম সংস্কৃতি হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। সময়ের ব্যবধানে সেই ‘ঘটা করে’ ফল খাওয়াটাকেই এখন ‘ফল উৎসব’ হিসেবে নিচ্ছে শিক্ষিত বাঙালি। তাই বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুরো জ্যৈষ্ঠ মাস এবং আষাঢ়ের প্রথমার্ধে ঘটা করে আয়োজন করেছে ফল উৎসব।

এ কাজে পিছিয়ে থাকেনি রাজেন্দ্র কলেজ বাংলা বিভাগ অ্যালামনাই এসোসিয়েশন (আরসিবিডিএএ)। দক্ষিণ বঙ্গের ঐতিবাহী বিদ্যাপিঠ ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সবচেয়ে সক্রিয় সংগঠন আরসিবিডিএএ গত বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে কলেজের বায়তুল আমান ক্যাম্পাসে অবস্থিত বাংলা বিভাগে আয়োজন করে ফল উৎসব।

উৎসবে আরসিবিডিএএ’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আব্দুল মোতালেব শেখ, সহ-সভাপতি, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ শহিদুল ইসলাম, চৈতন্যচন্দ্র দাস, মোহাম্মদ ফজলুল করিম উপস্থিত থেকে আয়োজনকে ঋদ্ধ করেন।

এছাড়া বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান তালুকদার আনিসুল ইসলাম বরাবরের মতোই আরসিবিডিএএ’র ফল উৎসবে উপস্থিত হয়ে আয়োজকদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেন।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আরসিবিডিএএ’র সহ-সভাপতি চামেলী বসু, সাধারণ সম্পাদক আসাদ জামান, সহ-সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম ও কাজী কাওছার সুইট, সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন পলাশ, কোষাধ্যক্ষ রুমা ঠাকুর, নির্বাহী সদস্য রোমানা আফরোজ, সদস্য মো. শামীম আক্তার কাকলী খানম, রাসেল মিয়া প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আব্দুল মোতালেব শেখ বলেন, ‘যেসব উদ্দেশ্য সামনে রেখে আরসিবিডিএএ গঠন করা হয়েছে, তার মধ্যে সংস্কৃতি আন্দোলন অন্যতম। সুতরাং আজকের এ উৎসব শুধু ফল খাওয়ার জন্য নয়, বাঙালি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াসও বটে।’

মোহম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো উপলক্ষ্য প্রয়োজন নেই, তোমরা (আরসিবিডিএএ’র সদস্য) বিভাগে এলেই উৎসব। আমরা চাই তোমরা এভাবে মাঝে-মধ্যেই আস। আমরা সব সময় তোমাদের সঙ্গে আছি।’

তালুকদার আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘তীব্র তাপদাহের কারণে আমি ভেবেছিলাম আজকের এ আয়োজন হয়ত স্থগিত করবে আরসিবিডিএএ। কিন্তু, এই মুহূর্তে কলেজের সবচেয়ে সক্রিয় সংগঠন হিসেবে তারা (আরসিবিডিএএ) সব ধরনের প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে আয়োজন সম্পন্ন করেছে। চমৎকার এ আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে ভালো লাগছে।’

চৈতন্যচন্দ্র দাস বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠকে মধুমাস হিসেবে আখ্যায়িত করলেও মূলত বসন্ত (ফাল্গুন) হচ্ছে মধুমাস। তবে, হরেক রকম ফলের সমারোহ এবং এর স্বাদ, গন্ধ ও ঐতিহ্যের কারণে এ মাসকেই মানুষ মধুমাস হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। বাংলা সাহিত্যেও জৈষ্ঠকে মধুমাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কেউ কেউ। সেই মধুমাস জ্যৈষ্ঠে না হোক আষাঢ়ে এসে হলেও আরসিবিডিএএ’র এই ফল উৎসব দারুণ এক আয়োজন। এ ধরনের আয়োজন তারা বারবার করবে, এটাই প্রত্যাশা।’

মোহাম্মদ ফজলুল করিম বলেন, ‘নানা ব্যস্ততার কারণে আমরা যখন এ ধরনের আয়োজনে উপস্থিত হওয়ার মতো সময় পাই না, ঠিক তখন এরা (আরসিবিডিএএ) কত সুন্দরভাবে আয়োজনগুলো করে ফেলে। প্রকৃতপক্ষেই এরা দারুণ কিছু করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে আরসিবিডিএএ’র সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’

উৎসবে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, তাল, লটকন, আনারসসহ নানা স্বাদ ও গন্ধের মৌসুমী ফল খাওয়ার মধ্য দিয়ে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করেন উপস্থিত অ্যালামনাই এবং বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষকবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *